বাড়ী রং করার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণ ও রং করার কয়েকটি ধাপ
রং করার পূর্বে যে বিষয়টি সর্ব প্রথম মনে রাখতে হবে- তা হলো উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত করে সঠিক পদ্ধতিতে রং প্রলেপ করা। আমরা যদি দেয়ালে রং করার চিন্তা করি, প্রথমেই দেয়ালের উপরিভাগ (ঘরের ভিতরে এবং বাইরে) উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা, ফাটল কিংবা দেয়ালে ছিদ্র থাকা, প্লাস্টার খসে পড়া এসব সমান করতে হবে। দেয়ালের পুরানো রং শিরিশ কাগজ অথবা স্ক্রাপার দিয়ে ঘষে-মেজে তুলে ফেলতে হবে। আস্তরণ করে ঘষে-মেজে মসৃণ করে নিতে হবে এবং শুকিয়েও নিতে হবে। দেয়ালের ভিতরে কিংবা বাইরে বৃষ্টি বা আদ্রতার কারণে শ্যাওলা বা ছত্রাক জমে থাকলে তাও পরিষ্কার করে নিতে হয়। কারণ দেয়াল রং করার জন্য পুরোপুরি উপযোগী না হলে এবং ঐ অবস্থায় রং করা হলে রংয়ের স্থায়ীত্ব ও সৌন্দর্য দুটোই ভেস্তে যাবে। দেয়ালে রং করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের রং পাওয়া যায়, যেমন প্লাস্টিক ইমালসন, সিল্ক ইমালসন, আউটার কোট, সিনথেটিক ডিস্টেম্পার, পাউডার কোটিং ইত্যাদি। একজন দক্ষ রং মিস্ত্রির সাথে আলোচনা করে রং নির্ধারণ করা ভালো। প্রয়োজনীয় আন্ডার কোট বা প্রাইমার লাগানো হয়ে গেলে সর্বশেষ মাস্টার কোট ব্যবহার করে কাজ শেষ করতে হবে, এতে বস্তুর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এর স্থায়ীত্ব অধিকতর বেড়ে যাবে।
প্লাস্টারের ওপরে সাধারণত রং করা হয়। আজকাল অনেকেই ঘরে ডিস্টেম্পারের বদলে প্লাস্টিক পেইন্টই করেন। বাড়ীতে রং করতে সাধারণত চারটি ধাপের প্রয়োজন হয়। ধাপগুলো হলো-
* সারফেস প্রিপারেশন
* প্রাইমার বা আস্তর
* পুটিং
* রঙের কোট
সারফেস প্রিপারেশন: প্লাস্টার অবশ্যই ভালোভাবে শুকাতে হবে এবং খুব ভালোভাবে কিউরিং হতে হবে। প্লাস্টার করার ৪৫ দিন পর রং করা উচিত। কেননা রং শুরু করার আগে যেকোনো ধরনের ড্যাম্প, স্যাঁতসেঁতে, ভেজা বা নষ্ট থাকলে তা ঠিক করে নিতে হবে। প্লাস্টার করা দেয়াল সমতল হতে হবে। সমতল না থাকলে তা পাথর দিয়ে ঘষে সমতল করতে হবে। এতে কোনো আলগা ময়লা বা অন্য কোনো পদার্থ থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর চুনের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ভালো হয়। এতে প্লাস্টার ভালোমতো শুকিয়ে যায়। এরপর স্যান্ডপেপার বা শিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে নিতে হবে।
প্রাইমার বা আস্তর: সারফেস প্রিপারেশন হয়ে গেলে প্রাইমার বা আস্তর দিতে হয়। এক আস্তর রঙ দেয়াকে বলা হয় প্রাইমার। মূলত প্লাস্টার ও রঙের মধ্যে আঠালো সম্পর্ক তৈরি করে এই প্রাইমার। প্রতি গ্যালনে ৪৫ স্কয়ার মিটার আস্তর দেয়া যায়। রোলার বা ব্রাশ দিয়ে প্রাইমার দেয়া হয়। দেয়ার আগে এই প্রাইমার পানি দিয়ে পাতলা করে নিতে হয়। এটি আঠালো সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সারফেসকে মসৃণ করে। এ ছাড়া শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রং সুন্দরভাবে ও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে দেয়।
পুটিং: কোনো ফাটল বা সমস্যা থাকলে পুটিং করা হয়। একে ছিট পুটিংও বলা হয়। কমপক্ষে চার দিনে এই পুটিং শুকিয়ে নিতে হবে। বেশি পুটিং যেখানে থাকবে, সেখানে স্ক্র্যাপ করে নিতে হবে। এক গ্যালন প্লাস্টিক পেইন্টের সঙ্গে এক লিটার এনামেল পেইন্ট এবং ২৫ কেজি চক পাউডার মিশিয়ে এই পুটিং তৈরি করা হয়।
রঙের কোট: রং দুই থেকে তিনবার প্রলেপ দেয়া হয়। প্রথম প্রলেপের পর সাত দিন শুকানোর সময় দিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় প্রলেপ। এতেও যদি রং ভালো না হয়, যেমন-পরিচ্ছন্ন না হয়, ছোপ ছোপ থাকে বা রং হালকা হয়ে থাকলে দ্বিতীয় প্রলেপের তিন দিন পর তৃতীয় প্রলেপ দেয়া হয়। প্রথম প্রলেপের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ পানি মেশানো হয়। দ্বিতীয় প্রলেপের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ ভাগ পানি। সরাসরি সূর্যের আলো যেন রং করার সময় না আসে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
0