রং ব্যবহারের ইতিহাস


পৃথিবীতে রং ব্যবহারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মানব সভ্যতা বহু প্রাচীন কাল থেকেই রং ব্যবহারে পারদর্শী ছিল। ধারণা করা হয় প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বেও রঙের ব্যবহার ছিল পৃথিবীতে। প্রাচীন মিশরীয়রা রং ব্যবহারে অধিকতর ধারণা রাখত, কারণ সেই সময়কার রাজা ফারাও এর সমাধিস্থলেও রং লেপনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। তারপর প্রাচীন রোম সভ্যতাও তাদের রাজাদের প্রাসাদ এবং অট্টালিকাগুলোতে রঙের ব্যবহার করেছিল। খৃষ্টের জন্মের ৪০০-৫০০ বছর পরেও গ্রিস এবং রোমের প্রাচীন বিভিন্ন গির্জা বা উপাসনালয়ে রঙ, বার্নিশ বা কারুশিল্প ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আধুনিক রং শিল্পের ইতিহাস ১৭০০ সালের পর থেকেই গণ্য করা হয়। তবে গত ১ শতাব্দী যাবৎ রঙ ও বার্নিশ শিল্প যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছে। বর্তমান সময়ে রং শিল্পের উন্নতির সাথে-সাথে মানুষের স্বাস্থ্যহানি যাতে না ঘটে সেই দিকেও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।

আমরা কেন রং বা বার্নিশ ব্যবহার করব তা ভাবলে দেখা যায়- যুগের পরিবর্তনের ফলে মানুষের মনেরও পরিবর্তন হয়েছে, তাই পরিবেশ ও আবহাওয়ার সাথে অধিকতর সামঞ্জস্য ও টেকশই থাকার জন্য মানুষের ব্যবহৃত দৈনন্দিন বস্তুতে রং, বার্নিশ বা কারু শিল্পের প্রয়োজন। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি পরিবেশের প্রতিকূল আবহাওয়া ও অবস্থা থেকে রক্ষার জন্যই সাধারণত রং ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আসবাবপত্রসমূহের মধ্যে অধিকাংশই তৈরি হয় কাঠ, বেত, বাঁশ, হার্ডবোর্ড, প্লাইউড এবং বিভিন্ন ধাতু দিয়ে। ধাতু ব্যতীত এই সকল বস্তু সাধারণত কীট ,পতঙ্গ, ছত্রাক বা উইপোঁকার আক্রমণের শিকার হয় এবং এই কারনে স্থায়ীত্ব কমে যায়। তাই গুণগত মান ও স্থায়ীত্বের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের বস্তুর উপর বিভিন্ন ধরনের রং বা বার্নিশের প্রলেপ দেয়া হয়ে থাকে। এতে সকল ব্যবহৃত বস্তুর কার্যকরিতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। অন্যদিকে বিভিন্ন ধাতুর তৈরি স্থাপনা বা সরঞ্জাম অধিকতর ক্ষয়রোধকারী হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার লক্ষ্যেই রং প্রলেপনের প্রয়োজন। বর্তমান যুগে আবাসনের ক্ষেত্রে একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে ইট ও সিমেন্ট দ্বারা তৈরি বিল্ডিং-দেয়াল। এই সকল দেয়াল ক্ষয়রোধকারী বৈশিষ্ট অর্জিত না হলে তা অধিকতর ব্যবহার উপযোগিতা হারাবে। অতএব, সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্যও রং প্রলেপন প্রয়োজন। রং ব্যবহারের বিকল্প নেই।

0