সিডনি অপেরা হাউস


সিডনি অপেরা হাউস বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। মানবজাতির ইতিহাসে মানব সৃজনশীলতা নির্বিশেষে শ্রেষ্ঠ শিল্প পথগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে দাঁড়িয়েছে। ২০০৪ সালে ২৪ জুন সিডনি অপেরা হাউসটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী কনভেনশনের অধীনে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি তাজমহল, পিরামিড, চীনের গ্রেট ওয়ালের পাশাপাশি পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। এটির স্থপতি ড্যানিশ স্থাপত্যবিদ জন উটজন (JORN UTZON)। ১৯৫৫ সালে অপেরা হাউজের জন্য ডিজাইন কম্পিটিশনের আয়োজন করা হয়। সে সময় ৩২ দেশের ২৩৩ জন আর্কিটেক্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে জন উটজন (JORN UTZON) ১ম স্থান অধিকার করেন।

অপেরা হাউসটি বেনেলং পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে যা একসময় ম্যাককুইরি বন্দর হিসাবে পরিচিত ছিল। অপেরাহাউসটি দূর থেকে দেখতে পাল তোলা একটি নৌকার মত মনে হয়।

সিডনি অপেরা হাউস

ইউনেস্কোর মতে ২০ শতকের একটি দুর্দান্ত স্থাপত্য, যা স্থাপত্য এবং গঠনমূলক নকশা উভয় ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের একাধিক স্তরকে একত্রিত করে। এটি একটি সাহসী ও স্বপ্নদর্শী পরীক্ষা যা ২০ শতকের শেষ দিকে উত্থাপিত স্থাপত্যের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে। সিডনি অপেরা হাউজের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন কাজ ও সুপারভিশন করে অভিরূপ এন্ড পার্টনারস্ (Ove Arup & Partners)।

প্রধান কনট্রাক্টর ছিল- এর সিভিল এন্ড সিভিক (CIVIL & CIVIC) লেভেল ১, হরনি ব্রুক (Horni brook) কাজ করে লেভেল ২ ও ৩-এ। ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে আর্কিটেক্ট পিটার হল (Peter Hall)। স্টেজ তৈরিতে কনসালটেন্ট ছিলেন বেন শেলেনজ (Ben Schlange)। একুয়াস স্টিক কনসালটেন্টস ছিলেন উইলহেম জর্ডান (Wilhelm Jordan)। সিডনি অপেরা হাউস ৩টি ধাপে তৈরি হয়েছে।

১. ১ম ধাপ: পোডিয়াম বা ভিত্তিস্তর (১৯৫৯ – ১৯৬৩)

২. ২য় ধাপ: রুফ বা ছাদ (১৯৬৩ -১৯৬৭)

৩. ৩য় ধাপ: ইন্টেরিয়র (১৯৬৭ – ১৯৭৩)

অপেরা হাউসের এক্সপ্রেশোনিস্ট ডিজাইনের প্রয়োজনে ছাদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয় প্রিকাস্ট কংক্রিটের শেল। যেগুলো বৃত্তাকার আকৃতি থেকে ত্রিভূজের আকার দেয়া হয়। বৃত্তাকার আকৃতির প্রিকাস্টগুলোর রেডিয়াস ২৪৬ ফুটের বেশী। ছাদ তৈরিতে এইরূপ ২,১৯৪ টি প্রিকাস্ট কংক্রিট শেল ব্যবহার করা হয়। এই শেলগুলোর প্রতিটির ওজন ১৫ টন। শেলগুলো ৫৮৮ টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

পিলারগুলো আবার সমুদ্রের পানির গভীরে ৮২ ফুট ডুবে থাকে। অপেরা হাউজটি ৪.৪ একর জমিতে বিস্তৃত। এটি লম্বায় ৬০০ ফুট এবং চওড়ায় ৩৯৪ ফুট। সর্বোচ্চ ছাদটি সমুদ্র সমতল থেকে ৬৭ মিটার (২২ তলা বিল্ডিং এর সমান) উঁচু।

অপেরা হাউজটিতে যে সকল ভেন্যু বা সুবিধা রয়েছে –

১. কনসার্ট হল: এখানে আছে ২,৬৭৯ টি দর্শক আসন। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মেকানিকাল ট্রাকার এ্যাকশন অর্গান, যা ১০,০০০ পাইপ সংযুক্ত।

২. জোয়ান সার্দারল্যান্ড থিয়েটার: (Joan Sutherland Theatre): ১,৫০৭ দর্শক আসনবিশিষ্ট একটি প্রসেনিয়াম থিয়েটার হল।

৩. ড্রামা থিয়েটার: ৫৪৪ দর্শক আসনসমৃদ্ধ, এটিও একটি প্রসেনিয়াম থিয়েটার হল।

৪. প্লে-হাউস: নন প্রসেনিয়াম থিয়েটার হল, যেটি ৩৯৮ আসনবিশিষ্ট।

৫. স্টুডিও: এটি একটি ফ্লেক্সিব্যাল স্পেস, যেখানে ২৮০টি পারমানেন্ট আসন আছে। তবে প্রয়োজন অনুসারে ৪০০ টি পর্যন্ত দর্শক আসনের ব্যবস্থা করা যায়।

৬. উটজন রুম: (UTZON ROOM) মাল্টি পারপাস ভেন্যু- যেখানে বিভিন্ন পার্টি, করপোরেট মিটিং-ফাংশান ছাড়াও ছোট আকারের অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়।

৭. রেকর্ডিং স্টুডিও: এটি একটি আধুনিক রেকর্ডিং স্টুডিও।

৮. আউটডোর ফোরকোর্ট: ফ্লেক্সিব্যাল ওপেন এয়ার ভেন্যু যেখানে প্রয়োজন মত বিভিন্ন ইভেন্ট এবং আউটডোর পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা হয়। এর বাইরে অন্যান্য স্থানসমূহে বিশেষ করে নর্দান ও ওয়েস্টার্ন ফয়ার এ অকেশনালি নানা রকম প্রদশর্নী, সেমিনার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়।

এর বাইরেও রয়েছে নানারকম সুযোগ-সুবিধা-যেমন আছে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, বারসহ রিটেইল আউটলেট। রয়েছে গাইড ট্যুরের ব্যবস্থা, যেখানে ব্যাকস্টেজ ও অন্যান্য অংশ ট্যুরিস্টদের ঘুরে দেখার সুযোগ আছে।

শুরুতে ১৯৬৬ সালে এই প্রজেক্টের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২.৯ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার, আর কাজটি শেষ করতে মোট ব্যয় হয় ১০২ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

অস্ট্রেলিয়ার ও ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম পদচিহ্ন সিডনি অপেরা হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

 

0