পাটখড়ি ও গাছের ডালপালা বোর্ড তৈরিতে ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে অনেকাংশে রেহাই পাচ্ছে দেশ-টি.কে. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর ডাইরেক্টর মার্কেটিং
টি.কে. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর ডাইরেক্টর মার্কেটিং মোফাচ্ছল হকের সাক্ষাৎকার
নির্মাণ গুরু: পারটিক্যাল বোর্ড কী ?
মোফাচ্ছল হক: Jute chips (পাট) এবং অব্যবহৃত কাঠ (wood chips) ও আঠার কম্বিনেশনে নির্দিষ্ট চাপ ও তাপ দিয়ে কম্পপ্যাক্ট করে যে বোর্ড তৈরি করা হয় তাই পারটিক্যাল বোর্ড। ভিন্ন ভিন্ন উপাদান ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে অন্য ধরনের বোর্ডও তৈরি করা হয়। যেমন: ভিনিয়ার বোর্ড , প্লাই বোর্ড, মেলামাইন বোর্ড, ফরমিকা এবোনাইট, এমডিএফ, এডিএফ বোর্ড এসব ভিন্ন ভিন্ন বোর্ড ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
নির্মাণ গুরু: পারটিক্যাল বোর্ডের চাহিদা আগামীতে কেমন হবে বলে মনে করেন?
মোফাচ্ছল হক: ধরেন আগের দিনে গ্রামের একটা বাড়ীতে একটা খাটেই ভাইবোনেরা মিলিমিশে ঘুমাতো, একই টেবিলে পড়ালেখা করতো। আজকের এই দিনে সেই গ্রামের বাড়ীতেই একাধিক খাট, একাধিক টেবিল ব্যবহৃত হচ্ছে। আর শহর অঞ্চলে ফ্ল্যাট কালচারের জন্য একটা বাড়ীতেই ১০গুণ মানুষ থাকছে। ফলে আসবাবের ব্যবহারও বেড়েছে ১০গুণ। আমাদের দেশে জাহাজ নির্মাণ সেক্টর বুস্ট করছে সেখানেও বোর্ডের চাহিদা বাড়ছে এবং কাঠের তৈরি আসবাব, দরজা, জানালা তৈরিতে যে ঝামেলা পোহাতে হয় পারটিক্যাল বোর্ডে তা নাই। আবার কাজের ফিনিশিং ও সৌন্দর্য বর্ধনে পারটিক্যাল বোর্ড পারফেক্ট। যেমন ধরেন কাঠের একটা টেবিল বা দরজা বানাবেন, সেখানে কিন্তু আপনাকে কাঠ জোড়া দিতে হবে, পারটিক্যাল বোর্ডে তা লাগছে না। কাঠে পানি লাগলে সমস্যা কিন্তু সে জায়গায় যদি মেলামাইন বোর্ড আপনি ব্যবহার করেন সেখানে এ সমস্যা নাই। এরকম নানা রকম কারণে আগামীতে বোর্ডের ব্যবহার আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।
নির্মাণ গুরু: বলা হয় কাঠের বিকল্প পারটিক্যাল বোর্ড, সেক্ষেত্রে পরিবেশের উপর এর প্রভাব কেমন?
মোফাচ্ছল হক: প্রতি বছর ২.৫% হারে বনাঞ্চল কমছে। পারটিক্যাল বোর্ড যদি না থাকতো এই হার অনেক বেশী হতো। হয়ত এতদিনে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যেত, তা কিন্তু হয়নি। এছাড়া বোর্ড তৈরিতে অন্যতম উপাদান পাটখড়ি বা গাছের ডালপালা বা এসবের অব্যবহৃত অংশগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা পাটখড়ি ও গাছের ডালপালা বোর্ড তৈরিতে ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে অনেকাংশে রেহাই পাচ্ছে।
নির্মাণ গুরু: আপনাদের প্রোডাক্ট যে সঠিক মানের সেটা আমরা কীভাবে বুঝবো বা এই মানদণ্ড কারা নির্ধারণ করে?
মোফাচ্ছল হক: আমাদের দেশে পারটিক্যাল বোর্ডের মান নির্ধারণ করার জন্য বিএসটিআইতে কোনো ল্যাবরেটরি নাই। এটা করা খুবই জরুরি, তা না থাকার কারণে ব্র্যান্ড/নন ব্র্যান্ড প্রডাক্ট আলাদা করার উপায় নাই। এমনটি চলতে থাকলে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে পাল্লা দিতে পারবো না।
নির্মাণ গুরু: এই শিল্পের জন্য সরকারী কী সুবিধা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
মোফাচ্ছল হক: এটা একটা বর্ধনশীল শিল্প। চাহিদাও রয়েছে প্রচুর, সে কারণে এই শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই তাদের উৎপাদন ক্ষমতা তিন চার গুণ বাড়িয়েছে, যা দেশের চাহিদার চেয়ে বেশী। এই বাড়তি উৎপাদন এক সময় আমাদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে, যদি না আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে না যাই। আর আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হলে প্রডাকশন কস্টিং কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা যেসকল উপকরণ আমদানি করি সেগুলোর ডিউটি ফি বা শুল্ক কমাতে হবে। এতে প্রডাক্ট খরচ অনেকাংশে কমবে, ব্যবসাও বৃদ্ধি পাবে, আর ভোক্তারাও কম দামে প্রডাক্ট পাবে। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরি করা দরকার, তাহলে ভোক্তারা আরো বেশী উন্নতমানের পণ্য পাবে।