পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার
আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ জমজ বিল্ডিং পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ৮৮ তলা বিশিষ্ট সুদর্শন ভবন দুটি- যা মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত। ভবন দুটির উচ্চতা ১৪৮২.৯ ফুট। মালয়েশিয়ার শীর্ষ স্থানীয় তেল কোম্পানি পেট্রোনাস ও মোবাইল কোম্পানি ম্যাক্সিস এর অর্থায়নে টুইন টাওয়ারটি নির্মিত। কিন্তু পেট্রোনাস কোম্পানির নামানুসারে টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়েছে পেট্রোনাস টাওয়ার।
১৯৯৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু, দুই দফা নির্মাণ কাজ শেষে ১৯৯৯ সালের আগস্টে মালয়েশিয়া প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মাহাথির বিন মুহাম্মদ টাওয়ারটির উদ্বোধন করেন। টাওয়ারটি নকশা করেছেন আর্জেন্টাইন-আমেরিকান স্থপতি সিজার পেলি। পেট্রোনাস টাওয়ারের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করা হয়েছে টিউব ইন টিউব ডিজাইন পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়াত ড. ফজলুর রহমান খান।
গ্লাস ও স্টিল ফ্রেমেড বিল্ডিংটিতে মালয়েশিয়ার মুসলিম স্থাপত্যের প্রভাব আছে। ভবনটির ক্রস সেকশনটি মুসলিম ঐতিহ্য রাব-ই-হিজাব এর অনুকরণে করা। ভবনটির বহিরাবরণ মুসলিম স্থাপত্য কুতুব মিনারের নকশা অনুসরণ করা হয়েছে। টাওয়ারটির নীচে ৩৯৩ ফুটের ফাউন্ডেশন গাঁথুনি আছে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ করেছে ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ব্যাচি সোল্টাঞ্চ।
বিল্ডিংটি নির্মাণের মূল উপাদান স্টিল ও পাথর। কিন্তু অবাক ব্যাপার- বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে শুধুই স্টিলের তৈরি। ভবনটির আট তলা পর্যন্ত শপিংমল। শপিংমলের ৫ তলা মাটির নীচে আর ৩ তলা মাটির উপরে অবস্থিত। শপিং মলটির নাম Suria Klcc। মলটিতে রয়েছে অজস্র দোকান, একটি আর্ট গ্যালারি, আন্ডার ওয়াটার একুরিয়াম, সাইন্স সেন্টার, ফিলহারমোনিক মিউজিক হল ইত্যাদি। টাওয়ারটির Structural Eng. THORNTON TOMASETTI (থ্রন্টন টমাসেট্রি)। পেট্রোনাস টাওয়ারের পিছনের দিকে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নানা রকমের আয়োজন রয়েছে। আছে একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক ও প্রশস্ত হাঁটার পথ, বিকালে দর্শকদের জন্য মনোমুগ্ধকর ওয়াটার ড্যান্স শো দেখানো হয়। এখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম সেতু, যেখানে দাঁড়িয়ে টাওয়ারের বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে পর্যটকদের জন্য।
জমজ টাওয়ার দুটির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার জন্যে ৪১ এবং ৪২তম তলায় সংযোগ স্থাপনকারী একটি দ্বিতল ব্রিজ আছে, সেটার নাম স্কাই ব্রিজ। স্কাই ব্রিজটি পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় দুই দালান সংযোগকারী ব্রিজ। এই স্কাই ব্রিজটি সমতল থেকে ৫৫৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই ব্রিজটি লম্বায় ১৯২ ফুট। ব্রিজটি সেফটি ডিভাইস হিসাবেও কাজ করে। আগুন বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় ব্রিজটি বর্হিগমনের পথ। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ব্রিজের ৪১তম তলার অংশেই কেবল পর্যটকরা টিকেট কেটে দেখতে পারে। ৪২তম তলার ব্রিজের অংশে শুধুমাত্র ঐ তলায় অবস্থিত অফিসে কর্মরত লোকজন ব্যবহার করতে পারে। ব্রিজটি দালানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত না। এটি প্রয়োজন অনুযায়ী গোটানো যায় এবং ছড়ানোও যায়। ব্রিজটি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করেছে। হলিউড ও বলিউডের বহু ছবির শুটিং হওয়ার কল্যাণে এই ব্রিজ ও ভবন ব্যাপক পরিচিত।
আরো বিস্ময়কর যে, টাওয়ারটিতে অবস্থিত Sumak Klcc শপিং মলটি এমনভাবে নির্মিত যে সেখানে ৬০,২৭,৭৮৯ বর্গফুটের মধ্যে কোনো কলাম নেই। সুপার শপিং মলটি মোট ১ কোটি ৫০লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে অবস্থিত। পেট্রোনাস টাওয়ারটি নির্মাণ করতে ১.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে- যা বাংলা টাকায় প্রায় ১২শ কোটি টাকা। পেট্রোনাস টাওয়ারের প্রতিটি মেইন লিফটই দ্বিতল বিশিষ্ট। জোড়া সংখ্যার লিফটগুলো জোড় সংখ্যার ফ্লোরে থামে, আর বেজোড় সংখ্যারগুলি থামে বেজোড় সংখ্যার ফ্লোরে।
0