বালুর রকমফের ও পরিচর্যা


বালুর আকার বা সাইজকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় FM বা ’ফাইননেস মডিউল’ বলে। বিভিন্ন এলাকার বালু বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত নির্মাণ কাজে বড় মাঝারি ও ছোট আকৃতির- তিন ধরনের বালু ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তার মধ্যে মাঝারি আকৃতির বালুই সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তি স্থান অনুযায়ী বালুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন: ১. নদীর বালু (রিভার স্যান্ড) ২. পিট বালু ৩. সাগরের বালু (সি স্যান্ড)। সাধারণত বাংলাদেশে নির্মাণ কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় নদীর বালু।

নির্মাণ কাজের জন্য বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত চার ধরনের বালু পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ১. ভিটি বালু ( ফিলিংয়ের জন্য, যার FM সবচে কম) ২. চিকন বালু বা প্লাস্টার বালু (প্লাস্টারের জন্য, যার FM ভিটি বালুর চেয়ে বেশী) ৩. লোকাল বালু (কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য, যার FM চিকন বালুর চেয়ে বেশী) ৪. সিলেট স্যান্ড বা লাল বালু (কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য, যার FM লোকাল বালুর চেয়ে বেশী যা ২.৩-২.৯ এর মধ্যে থাকে), তবে ঢালাই কাজের জন্য সিলেট স্যান্ড অত্যন্ত গুণমানসম্পন্ন।

ভিটি বালু: স্থাপনার ভিত্তির ভরাট কাজে ব্যবহৃত হয়। এই বালির মধ্যে মাটিসহ অন্যান্য উপাদান থাকে। এতে কোনো ক্ষতি নেই। এই বালি অনেক চিকন হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার বালুর মধ্যে এর FM সবচেয়ে কম।

চিকন বালু: ভিটি বালুর চেয়ে এই বালু মোটা হয় অর্থাৎ FM বেশী হয়। এই বালু সাধারণত প্লাস্টার কাজে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের পূর্বে এই বালু পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নেয়া উত্তম। বালু ধোয়ার অসুবিধা থাকলে নিদেন পক্ষে চিকন চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হবে। কারণ বালুর মধ্যে মাটি, চুনসহ নানা রকম সিল্ট ও ময়লা অপদ্রব্য থাকে। ফলে বালু ধুয়ে বা না চেলে প্লাস্টার কাজে ব্যবহার করলে পরবর্তীতে প্লাস্টারে নোনা ধরার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে।

লোকাল বালু: চিকন বালুর চেয়ে বেশী মোটা অর্থ্যাৎ FM বেশী। এই বালু ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তারের জালিতে বালু চেলে নিতে হবে। সম্ভব হলে চিকন বালু যেভাবে ধুয়ে নেয়া হয় সেভাবে ধুয়ে নিলে ঢালাইয়ের গুণগত মান অনেক বেশী ভালো হবে। এই বালুর FM ১.৬-১.৮ এর নিচে না হওয়াই উত্তম।

সিলেট স্যান্ড: সবচেয়ে বেশী মোটা বালু, যার FM সাধারণত ২.৩-২.৯ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বালুও ব্যবহারের পূর্বে চালুনিতে চেলে নেয়া অতি উত্তম।

বালু ধোয়ার প্রক্রিয়া: একটা চৌবাচ্চা বানাতে হবে ইটের গাঁথুনি দিয়ে-যার দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৪ ফুট, উচ্চতা ৩ ফুট ( বা চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী আকৃতির)। এরপর চৌবাচ্চা প্লাস্টার করে নেট সিমেন্ট করে নিতে হবে। চৌবাচ্চার নীচের দিকে একটা পানির আউটলেটের জন্য একটি পাইপ দিয়ে ছিদ্র রাখতে হবে। এবার চৌবাচ্চাটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভরে পানির মধ্যে বালু ফেলতে হবে। এরপর বালু নাড়াচাড়া করার জন্য পানির মধ্যে একজন নেমে পা দিয়ে বালুগুলো নাড়তে হবে। প্রয়োজন অনুসারে পা দিয়ে নাড়ানোর পর ময়লা পানি বের করার জন্য আউটলেটটি খুলে দিতে হবে। এভাবে দুই তিনবার চৌবাচ্চায় পানি দিয়ে বালু পা দিয়ে অথবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভালোভাবে ভানাড়াচাড়া করতে হবে এবং যথারীতি ময়লা পানি অপসারণ করতে হবে। এভাবে  পরিষ্কার হওয়া বালি কাজে ব্যবহার করতে হবে।

0