পারটেক্স দেশেই বিশ্বমানের জিপসাম বোর্ড তৈরি করছে


বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পে প্লাইউড বহুল ব্যবহৃত হলেও জিপসাম বোর্ডের ব্যবহার এখনো অতটা প্রচলিত নয়। অথচ স্থাপনা নির্মাণ কিংবা সাজসজ্জায় সাধারণ প্লাইউড বা ইটের চেয়ে জিপসাম সিলিং কিংবা জিপসাম ওয়াল বোর্ড অধিক টেকসই ও সাশ্রয়ী। বাংলাদেশের মতো অগ্নিদুর্ঘটনাপ্রবণ দেশে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে জিপসাম ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট বোর্ড।
এক সময় বাংলাদেশের জিপসাম সিলিং ও জিপসাম বোর্ডের পুরো বাজারটি ছিল চীন ও থাইল্যান্ডের দখলে। নিম্নমানের বিদেশি জিপসাম বোর্ডের কারণে ক্রেতারা পরিবেশবান্ধব এই নির্মাণসামগ্রীর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। 
বাংলাদেশে পারটেক্সই প্রথম নিজস্ব কারখানায় বিশ্বমানের জিপসাম বোর্ড ও জিপসাম সিলিং উৎপাদন শুরু করেছে। পারটেক্সের উৎপাদিত জিপসাম বোর্ড, জিপসাম ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট বোর্ড ও জিপসাম সিলিং দেশীয় বাজারের শতভাগ চাহিদা মিটিয়ে ভারতসহ অনান্য পার্শ¦বর্তী দেশে রফতানি করা সম্ভব। 
গত বছরের মে থেকে দেশেই বিশ্বমানের জিপসাম সিলিং, জিপসাম স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড, জিপসাম ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট বোর্ড তৈরি করছে পারটেক্স জিপসাম বোর্ড মিলস লিমিটেড। বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে খুব শিগগিরই বাজারে আসছে পারটেক্স জিপসাম ময়েশ্চার রেজিস্ট্যান্ট বোর্ড। 
নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ১ লাখ ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল আয়তনজুড়ে গড়ে উঠেছে পারটেক্স জিপসাম বোর্ড মিলস। পারটেক্সের জিপসাম বোর্ডের কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ অটোমেটিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের সিলিং, স্ট্যান্ডার্ড ও ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট জিপসাম বোর্ড। কমপ্লায়েন্স এ কারখানাটিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মকর্তার দিন-রাতের পরিশ্রম ও মেধায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী। 
জিপসাম বোর্ড তৈরির বিশাল এই কর্মযজ্ঞ ঘুরে দেখা যায় জিপসাম পাউডার মিশ্রণ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত চলছে কঠোর নজরদারি।
কারখানার টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ ইমদাদুল হক জানালেন, বোর্ড তৈরির কোনো পর্যায়েই তারা মানের সঙ্গে আপস করেন না। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের জিপসাম বোর্ড কারখানায় ৩২ বছর কাজ করে আসা ইমদাদুল হক জানালেন, তাদের কারখানাতে উৎপাদিত জিপসাম বোর্ড সম্পর্কে ক্রেতারা খুবই সন্তুষ্ট। সঠিক স্থাপনায় সঠিক পুরুত্বের জিপসাম বোর্ড ও সিলিং ব্যবহার করলে এটি লাইফ টাইম ব্যবহারেও কিছু হয় না বলে জানালেন তিনি। 
পারটেক্স জিপসাম সিলিং বোর্ড ওজনে হালকা, তাই ভূমিকম্পে সাধারণ ইটের দেয়ালের চেয়ে বেশি সহনীয়। শব্দ ও তাপ প্রতিরোধক বোর্ডগুলোতে পোকামাকড়ও আক্রমণ করতে পারে না। পারটেক্সের ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট বোর্ড ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আগুন প্রতিরোধ করতে পারে। 
বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন জিপসাম প্রযুক্তির সঙ্গে সারাদেশের নির্মাণ শ্রমিকদের পরিচিত করে দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে পারটেক্স জিপসাম। ‘স্বনির্ভর’ নামের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী নির্মাণ শ্রমিকদের সনদপত্র দেয়া হবে। 
জিপসাম বোর্ড তৈরির মূল উপাদান জিপসাম পাউডারের উৎপত্তি প্রাকৃতিক পাথরের খনি থেকে। পারটেক্স মূলত এসব জিপসাম পাউডার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। 
পারটেক্স স্টার জিপসাম বোর্ড মিলস লিমিটেডের হেড অব প্ল্যান্ট মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূইয়া কারিকাকে জানান, চায়না থেকে আমদানিকৃত জিপসাম বোর্ডগুলো তৈরি হয় কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য থেকে। যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। কিন্তু পারটেক্সের আমদানিকৃত জিপসাম পাউডার সরাসরি খনি থেকে সংগৃহীত। এই জিপসাম পাউডার থেকে উৎপাদিত জিপসাম বোর্ডে কোনো স্বাস্থঝুঁকি নেই। তিনি আরও বলেন, চায়না থেকে যেসব জিপসাম বোর্ড আমদানি করা হয়, সেগুলোর পুরুত্ব ও স্থায়িত্ব কম। 
দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পারটেক্সের সুনাম ও দায়বদ্ধতা থাকায় পারটেক্স স্থানীয় বাজারে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড সরবরাহ করে থাকে বলে জানান তিনি। 
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব স্থাপনা ও নির্মাণসামগ্রীর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই সূত্র ধরে দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পারটেক্স এই প্রথম নিজেদের কারখানায় পরিবেশবান্ধব জিপসাম বোর্ড উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু ট্যারিক ভ্যালু ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চায়না থেকে আমদানিকৃত কমদামি নিম্নমানের জিপসাম বোর্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেশি দূর এগোনো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। 
দেশীয় পরিবেশবান্ধব শিল্প রক্ষায় সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান মনিরুজ্জামান ভূইয়া। তিনি জানান, স্থানীয় বাজারে জিপসাম বোর্ডের চাহিদা কম থাকায় কারখানাটি বর্তমানে সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ বোর্ড উৎপাদন করছে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী জিপসাম বোর্ডের ব্যবহার বাড়াতে সরকার, রিহ্যাব ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মহল যদি এগিয়ে আসে তাহলে জিপসাম বোর্ড আবাসন খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে আশবাদ ব্যক্ত করেন মনিরুজ্জামান ভূইয়া। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ হলে একদিকে যেমন হাজারো বেকারের কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে দেশে স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশবান্ধব জিপসাম বোর্ডের ব্যবহারও বাড়বে। 
কারখানা দেখে ফেরার সময় হেড অব প্ল্যান্ট মনিরুজ্জামান একটি চমকপ্রদ তথ্য জানালেন, এত বড় কারখানাটি চলছে কোনো কাঠ-কয়লা না পুড়িয়েই। পাশের পারটেক্স প্লাইউড কারখানার ফেলে দেয়া জুট ডাস্ট ও উড ডাস্ট থেকেই জ্বালানির জোগান আসছে এত বিশাল এই কারখানাটিতে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী জিপসাম বোর্ড তৈরিও হচ্ছে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই।

মির্জা মাহমুদ আহমেদ,কারিকা প্রতিবেদক.

 

0